মান্দারবাড়িয়া, বাংলাদেশের এক অজানা সমুদ্র সৈকত
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2021বার পড়া হয়েছে।
বাংলাদেশে যে মান্দারবাড়িয়া নামে একটা সমুদ্র সৈকত আছে তা বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই অজানা। সাতক্ষীরা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরে মান্দারবাড়িয়ায় বন আর তার সম্মুখে বঙ্ গোপসাগরের তীর জুড়ে নয়নাভিরাম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। সাতক্ষীরার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব আনুমানিক ৭৫ কিলোমিটার। নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে যাওয়া যায়, তার পরের পথ যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী। বুঝতেই পারছেন মান্দারবাড়ীয়া কেবল মাত্র হার্ডকোর ঘুরুঞ্চিদের জন্য। মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোনো মানুষকেই নেশা ধরিয়ে দেবে। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির অপরূপা সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা-যা এখনও কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকার শ্যামলী থেকে সাতক্ষীরার বাস ধরে সাতক্ষীরা/শ্যামনগর যেতে হবে। সাতক্ষীরা সদর থেকে বুড়িগোয়ালীনি ৭০ কিলোমিটার। সহজে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুরস্থ নৌঘাট থেকে। ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্টিমার বোটে করে শীত মৌসুমে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) সময়ে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে। স্টিমার বা ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬/৭ ঘণ্টা। স্পিড বোট যোগে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া পৌঁছাতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
মান্দারবাড়িয়ায় যাওয়ার নদী পথ
নীলডুমুর ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের সঙ্গমস্থলের পাশ কাটিয়ে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী হয়ে পৌঁছতে হবে মান্দারবাড়িয়ায়। এই যাত্রাপথের পাশে দেখা যাবে আরো বিশাল নদী। এই নদীগুলোর উভয় পাশেই দেখা যাবে চিরহরিৎ সুন্দরবনকে। দেেখ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এ যেন সবুজের রাজ্য। সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, পশুর, গরান, গোলপাতা, সিংড়া, হেতাল, খলসী, গেওয়া গাছের সম্মিলনে এখানে ঘটেছে সবুজের মিলনমেলা। ম্যানগ্রোভ ফরেষ্টের শ্বাসমূল আর তাতে হরিণ সহ নানা প্রাণীর ছুটে চলা আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে। নয়ন ভরে দেখার মত েস দৃশ্য। পানকৌড়ি আর বালিহাসের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে যাবেন মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে।
প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা এই সমুদ্র সৈকত যেন ছবির মত । অসম্ভব ভালোলাগার আচ্ছন্নতায় মুগ্ধ। কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া, ইনানী, সেন্টমার্টিন সহ বঙ্গপোসাগরের অনেকগুলো সৈকত হয়তো দেখেছেন। সুন্দরবনে এসে এত বড় একটি সৈকতের দেখা হয়ে যাবে তা হয়তো কেউ ভাবতেও পারবে না। মান্দারবাড়িয়া অন্য সৈকতগুলো হতে একেবারেই আলাদা। অপূর্ব সৌন্দর্য ঘেরা এক জায়গা। পিছনে বাঘের ভয় আর সামনে অসম্ভব ভালোলাগার হাতছানি দেয়া সমুদ্র, বিস্তীর্ণ সৈকত, সবুজ রহস্যে ঘেরা বন। পর্যটকেরা এখানে নির্জন সৈকতে নিজেকে নষ্টালজিয়ার জালে জড়িয়ে খুঁজতে থাকবেন ভিন্ন এক অনুভূতি। সৈকতের বুকে হরিণ আর বাঘের পায়ের ছাপ েস সম্মোহনকে আরও বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুন। তাই যারা ভ্রমন বিলাসী, ঘুরুঞ্চি আর এ্যাডভেঞ্চার করত আগ্রহী তারা ঘুরে আসুন দেশের অজানার সুন্দর সৈকত মান্দারবাড়িয়া থেকে আর নিজের নামটা লিখিয়ে রাখুন নতুনদের তালিকায়।
কোথায় থাকবেনঃ মান্দারবাড়িয়াতে থাকার জন্য কোন স্থাপনই নেই। বনবিভাগের ১টি ভবন ছিল যা গত আইলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। থাকতে হবে সাতক্ষীরার কোন হোটেলে কিংবা শ্যামনগর রেষ্ট হাউজে।
প্রয়োজনীয় তথ্যঃ স্পটে পৌছানোর ব্যয় ৬,০০০.০০ টাকা।
বিশ্ব খ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের নিভৃতে লুকিয়ে আছে দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষন করার মত একটি দর্শনীয় স্থান মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। কিন্তু লোকালয় থেকে অনেক দূরে হওয়ায় কারনে যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং পর্যটকদের থাকার কোন ব্যবস্থা না থাকায় এ সমুদ্র সৈকতটি তেমন পরিচিতি লাভ করেনি।সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি থেকে মান্দরবাড়িয়া যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে পর্যটনের নতুন দিক উন্মোচিত হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। বন, সৈকত আর সমুদ্র একই সাথে তিন প্রকৃতির রুপে মুগ্ধ হবেন দেশী বিদেশী পর্যটকরা। সরকারী বা বেসরকারী ভাবে উদ্যোগী হয়ে মান্দারবাড়িয়া সৈকতে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ করা হলে এই দ্বীপটি দেশের অন্য যে কোন দর্শনীয় স্থানকে হার মানাবে। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে লুকিয়ে থাকা মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ করে দেশের পর্যটন শিল্পের নতুন দিক উম্মোচিত করা হোক এ দাবী এ দ্বীপে ঘুরতে আসা সকল পর্যটকদের।
তথ্যসুত্রঃ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন
২,৩১১ বার পড়া হয়েছে
অসাধারন!!
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
অসাধারন!! খুব ভাল লাগল। খুব সুন্দর আপনার ভ্রমণ কাহিনী। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
ছবিগুলো খুব চমৎকার হয়েছে।
সব অজানা সৈকতগুলি দেখি আপনার জানা।ভাল লাগল সুন্দর ছবি সম্বলিত মান্দারবাড়িয়া সৈকতের বর্ননা।